রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা কত জানেন? না জানলে জেনে নেন।

চলতি ২০১৬ সালে জনসং্খ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। কারণ সর্বশেষ আদমশুমারির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮৯ লাখ। ২০১৪ সালের পর এক বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ২১ লাখ। ২০১৫ সালের মোট জনসংখ্যায় পুরুষ ৭ কোটি ৯৬ লাখ, আর নারী ৭ কোটি ৯৩ লাখ। তারুণ্য নির্ভর এই বিশাল জনগোষ্ঠীতে ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সীদের হার ৩০.৮ শতাংশ। আর ১৫ থেকে ৪৯ বছর পর্যন্ত বয়সী জনসংখ্যা ৫৩.৭ শতাংশ। অর্থাৎ পঞ্চাশের নীচে বয়স, এমন মানুষের সংখ্যা এখন দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৫ শতাংশ। ২০১১ সালেও ছিল একই চিত্র। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনসংখ্যার হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরে একই স্থানে স্থির হয়ে আছে। ২০১১ সালে বৃদ্ধির যে হার ছিল ১.৩৭ শতাংশ, ২০১৫ সালে এসেও তা সেখানেই রয়ে গেছে। জনসংখ্যা বাড়ছে, স্বাভাবিকভাবে বাড় জনঘনত্বও। ২০১৫ সালে এসে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭ জনে, ২০১১ সালে যা ছিল ১ হাজার ২১। বেড়েছে গড় আয়ু, কমেছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার : বেড়েছে জনসংখ্যা, পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের গড় আয়ুও। ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে তা দশমিক ২ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৭০.৯ বছর। ২০১১ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৯ বছর। বরাবরের মতো পুরুষের চেয়ে নারীদের গড় আয়ু ২০১৫ সালেও বেশি পাওয়া গেছে। নারীদের গড় আয়ু ৭২ বছর আর পুরুষের ৬৯.৪ বছর। ২০১৪ সালে নারী-পুরুষের গড় আয়ু ছিল যথাক্রমে৭১.৬ ও ৬৯.১ বছর। আয়ু বাড়ার পাশাপাশি কমেছে মাতৃ মৃত্যুর হার। ২০১১ সালে ২.০৯ শতাংশের এই হার চার বছর পর এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮১ শতাংশে। অন্যদিকে কমেছে এক বছরের নীচের শিশু মৃত্যুর হারও। ২০১৫ সালে এটি নেমে এসেছে ২৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল যা ৩৫ এবং ২০১৪ সালে ৩০ শতাংশ। নারী-পুরুষের বিয়ের গড় বয়স :বেড়েছে নারী-পুরুষের বিয়ের গড় বয়সও। জাতীয়ভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে এই বয়স ২০১৪ সালে ছিল ২৪.৯ বছর। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫.৩ বছর। শহুরে পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ২৬.৪ বছর আর গ্রামে ২৪.৮ বছর। গ্রামের পুরুষরা শহরের তুলনায় এখনো অল্প বয়সেই বিয়ে করে থাকেন।
অন্যদিকে নারীর ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে বিয়ের গড় বয়স ১৮.৭ বছর। ২০১৪ সালে যা ছিল ১৮.৫ এবং ২০১১ সালে ১৮.৬ বছর। নারীদের বিয়ের গড় বয়সে কার্যত যে কোন অগ্রগতি নেই, এই পরিসংখ্যান তারই চিত্র। বাল্যবিবাহ যে এখনো প্রকট, এ পরিসংখ্যান তারও স্মারক। শহুরে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২০১৫ সালে ছিল ১৯.৮ বছর, আর ২০১৪ সালে ১৯.৭। গ্রামের ক্ষেত্রে গড় বয়স ২০১১ সাল থেকে একই জায়গায় স্থির হয়ে আছে, ১৮.৩ বছরে। কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার : পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কমছে। ২০১৪ সালে ৬২.২ শতাংশের হার ২০১৫ সালে একটু কমে দাঁড়িয়েছে ৬২.১ শতাংশে। ২০১১ সালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ছিল ৫৮.৩ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৬২.৪ শতাংশ হলেও পরের দুই বছর তা কমতে থাকে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে দেশে সচেতনতামূলক প্রচারণা কমে যাওয়ার প্রভাব পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন : নলকূপের বিশুদ্ধ খাবার পানি ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সুনাম আছে। তবে তা কমছে। ২০১১ সালে ৯৮.২ শতাংশ মানুষের খাবার পানির উৎস ছিল নলকূপ। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৯ শতাংশে। শতভাগ স্যানিটেশনের যে লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হচ্ছে, সে দিকেই হাঁটছে বাংলাদেশ। ২০১১ সাল থেকে টানা ৪ বছর স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতেন ৬৩ কি ৬৪ শতাংশ মানুষ। ২০১৫ সালে এসে তা ১০ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৭৩.৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে একটি বৈপরিত্যের চিত্রের কথাও বলছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারে ব্যাপকভাবে বাড়লেও কমে নি উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার। উল্টো তা বেড়েছে। এখনো শতকরা ৩.৩ ভাগ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন, ২০১১ সালে যা ছিল ২.৭ ভাগ।বেড়েছে সাক্ষরতার হার : সাক্ষরতা হার বেড়েছে দেশে। ২০১৪ সালে এই হার ছিল ৫৮.৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩.৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে পুরুষের সাক্ষরতার হার ছিল ৬৫.৫ শতাংশ এবং নারীর ৬১.৬ শতাংশ। ধর্মীয় জনগোষ্ঠী : প্রকাশ করা হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মোট জনসংখ্যার অনুপাতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা একটু কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে অন্য ধর্মের মানুষের সংখ্যা। ২০১১ সালে মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছিল মোট জনসংখ্যার ৮৮.৮ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে শতকরা ৮৯.২ ভাগ হলেও ২০১৫ সালে এসে তা কমে দাঁড়ায় ৮৮.২ শতাংশে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হার বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ। ২০১৪ সালে ৯.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে হয়েছে ১০.৭ শতাংশ। খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এই হার এক বছরের ব্যবধানে ০.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.১ শতাংশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Adbox